বিএনপির প্রতিষ্ঠা ও রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তম।
—লেখক শারফিন চৌধুরী।।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তম ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশকে একটি আধুনিক সমৃদ্ধশালী স্বনির্ভর, উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসাবে বিনির্মানের পরিকল্পনা থেকেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
সংক্ষিপ্তভাবে বললে, ৭০’এর নির্বাচনের পর পাকিস্তানী দুঃশাসক হানাদারেরা যখন যুক্তফ্রন্ট বা পূর্বপাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ নিরঙ্কুশ বিজয়কে পদধূলিত করে ছিনিয়ে নিয়ে ছিল তখনই আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জরুরত অনুভব করেছিলাম। কিন্তু পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের বিভিন্ন আশ্বাস ও প্রলোভনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দায়িত্বশীল নেতারা আশান্বিত হয়ে পাকিস্তানীদের দয়া ও করুণা ভিক্ষার প্রতিক্ষায় অপেক্ষমাণ ছিলেন। দফায় দফায় এমনকি গোল টেবিল বৈঠকের পরও কোন আশানুরূপ ফলাফল না পেয়ে তারা বারবার ব্যর্থ ও অধিকার বঞ্চিত হয়েছিলেন। তবু্ও নেতারা আশায় আশায় প্রতিক্ষমাণ ছিলেন। হয়তো পশ্চিম পাকিস্তানীরা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ যুক্তফ্রন্টকে সরকার গঠনের সুযোগ দিবে। এভাবেই কাল ক্ষেপণ হতে লাগলো। তারই ধারাবাহিকতায় ৭১ এর ৭ই মার্চে দাবী আদায়ের প্রেক্ষিতে গোটা পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পশ্চিম পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে জ্বালাময়ী ভাষণে হুংকার প্রদান করেন। দেশকে শত্রু মুক্ত করতে এবং গনতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহবানের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানীদের হুশিয়ার ও হুমকির বার্তা প্রদান করেন। কিন্তু পাকিস্তানী হানাদারেরা তাতে কোনও ভ্রুক্ষেপ বা কর্ণপাত না করে বরং পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ নিরস্ত্র মানুষের উপর বর্বরোচিত হামলা, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ সাধারণ অসহায় মানুষ দিশেহারা হয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন কিন্তু হত্যাকারী পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার মতো সাহসী কোন নেতা বা রাজনীতিবিদ তখন পূর্বপাকিস্তানের নিরীহ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াননি। অখণ্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রীপরিষদ গঠনের লালায়িত রঙ্গিন স্বপ্ন কিংবা রাজনৈতিক হিসাবনিকাশ ও কূটকৌশলের কারনেই হয়তো সেটা সম্ভব হয়নি তাই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়নি। কারণ একদিকে ছিলো অখণ্ড পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তান বা যুক্তফ্রন্টকে নিয়ে মন্ত্রীপরিষদ গঠন করার প্রতারণা মূলক প্রলোভন, মিথ্যা আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি, অন্যদিকে ছিলো প্রাণের ভয়। প্রাণের ভয় এজন্যই ছিলো, স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ায় পর যদি আমরা যুদ্ধে বিজয়ী হতে না পারি, বাংলাদেশ যদি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিনত না হয় তাহলে পশ্চিম পাকিস্তানীদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে জীবন দিতে হবে বাংলাদেশের সেই স্বাধীনতার ঘোষনাকারী স্থপতিকে। তাই তৎকালীন আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতাদের বিভিন্ন চাপ ও অনুরোধের প্রেক্ষিতেও আওয়ামিলীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে রাজী হননি। বরং তিনি মিথ্যা আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মন্ত্রীপরিষদ গঠনের রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিলেন। যার রেফারেন্স বা প্রমাণ স্বাধীনতা উত্তর আওয়ামীলীগের বিভিন্ন লেখক, বুদ্ধিজীবী, আমলা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বইয়ে রয়েছে।
ঠিক সেই দুর্যোগময় ক্রান্তিলগ্নে পুর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত অতর্কিত হামলা ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর এক মেজর প্রাণের মায়া ত্যাগ করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুঃসাহসী বীরের ভুমিকায় অবতীর্ণ হন এবং চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বীরদর্পে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রু মোকাবেলা করার আহবান জানান। দুর্যোগময় ক্রান্তিকালে এই সাহসী বীরের বীরত্বপূর্ণ ঘোষণা মুহুর্তেই সারাদেশের আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের মুক্তিকামী দিশেহারা মানুষ স্বস্তি ও সাহস ফিরে পায়। সেই মেজর জেড ফোর্স ও সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব নিয়ে ৭১’এর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ সময় যুদ্ধে সুদীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে মতান্তরে লক্ষ লক্ষ শহীদ ও মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার বিজয় অর্জন করেন। একটি পতাকা, একটি মানচিত্র ও একটি দেশ তার নাম মেজর জেনারেল রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তম’ই স্বাধীন সার্বভৌম ও আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা স্থপতির আসনে অধিষ্ঠিত হবেন।
তারপর ৭৫ সালে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীদের ইন্দনে তাদের এজেন্টরা আবারও গনতান্ত্রিক স্বাধীন বাংলাদেশে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে, গনতন্ত্রকে হত্যা করে একনায়কতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামিলীগ (বাকশাল) গঠন করেন। যেখানে এক রাজার এক দেশ শেখ মুজিবের বাংলাদেশ কায়েম করে তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা ছিলো। কিন্তু অন্য আধিপত্যবাদীদের ইন্দন ও মদদে বাকশাল নেতৃবৃন্দের নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৫ ই আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় এবং প্রতিপক্ষ বাকশাল নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে আবারও মন্ত্রী পরিষদ গঠিত হয়।
এমন বহু পরিস্থিতির বিভিন্ন চড়াই-উৎরাই ও দেশের ক্রান্তিকালে বিপন্ন স্বাধীনতা রক্ষায় সিপাহী জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও বিপ্লবের মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা হয়। বৈদেশিক উপনিবেশিক, সাম্রাজ্য ও আধিপত্য বিস্তারকারী ইন্দনদাতা অপশক্তির কাছ থেকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে একটি স্বনির্ভর, সমৃদ্ধশালী, উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী গনতান্ত্রিক আধুনিক বাংলাদেশ হিসাবে বিনির্মানের পরিকল্পনা থেকেই ১৯৭৮ সালের আজকের ১লা সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
আজ সেই ঐতিহ্য, সংগ্রাম, সাফল্য ও গৌরবের
বিএনপির ৪৭’তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সফল হউক, স্বার্থক হউক।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এইদিনে জিয়া তোমায় পড়ে মনে, লাল সবুজের পতাকায় জিয়া তোমায় দেখা যায়, সারা বাংলার ধানের শীষে জিয়া তুমি আছো মিশে, টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সবাই বলে জিয়া জিয়া,
মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম।
—
শারফিন চৌধুরী রিয়াজ।
সাবেক ছাত্রনেতা ও সহ সভাপতি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল, হবিগঞ্জ জেলা।
Leave a Reply